মুক্তিযুদ্ধের সময় বাংলাদেশিদের অনেকেই শরণার্থীতে পরিণত হয়েছিল। তাই, বাংলাদেশকে বিশ্বের যে কোনোখানে জাতিগত নিপিড়ণের বিরুদ্ধে দাঁড়াতে হবে। এই রাষ্ট্র যদি প্রতিবেশি রোহিঙ্গাদের পাশে আশ্রয় ও সাহায্য-সহযোগিতা করে, তাহলে দেশের নাম ও মানবতাবোধ উজ্জ্বল হবে। আমরা এই সমস্যা তাই কোনোভাবে এড়িয়ে যেতে পারি না। বাংলাদেশ সরকারের প্রতি আহ্বান জানাই, এই নির্যাতিত জাতিগোষ্ঠীর প্রতি সহায়তার জন্য এবং তাদেরকে পুশব্যাক না করে আশ্রয়কেন্দ্রে রেখে জাতিসংঘ ও আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোর সাথে বসে মিয়ানমারের সাথে আলোচনার মধ্য দিয়ে সমস্যার সমাধান করা হোক। জাতীয় প্রেসক্লাবের ভিআইপি লাউঞ্জে ৩০ জানুয়ারী সোমবার সকাল ১১টায় লিটল ম্যাগাজিন ‘কবিতার রাজপথ’র উদ্যোগে ‘রোহিঙ্গা গণহত্যা, শরণার্থী সমস্যা ও বিশ্ব মানবতা : বাংলাদেশ’ প্রেক্ষিত শীর্ষক সেমিনার বৈঠকে বক্তারা এসব কথা বলেন। মিয়ানমারের নিপিড়িত রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর উপর সেই দেশের শাসক শ্রেণির বর্বর নির্যাতন, গণহত্যা ও মানবাধিকার লঙ্ঘনের প্রেক্ষিতে এবং নিপিড়িত ও ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীর সহায়তায় বিশ্ব মানবতার এগিয়ে আসার প্রয়োজনীয়তা সম্পর্কে বৈঠকটি আয়োজন করা হয়েছিল। উক্ত সেমিনারে সভাপতিত্ব করেছেন জাতিসত্ত্বার কবি মুহম্মদ নূরুল হুদা। আরো উপস্থিত ছিলেন গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়ক জোনায়েদ সাকি, জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব গোলাম শফিক, ব্যারিষ্টার নূরুল অজিম ও বাংলাদেশ বুড্ডিষ্ট মংক সোসাইটির সহ-প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক করুণা প্রিয় ভিক্ষু। উক্ত অনুষ্ঠানের সাথে সংহতি প্রকাশ করেছেন অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ, ইমেরিটাস অধ্যাপক সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী, বিশিষ্ট বুদ্ধিজীবী অধ্যাপক আবুল কাসেম ফজলুল হক এবং বিশিষ্ট সাহিত্যিক ও বুদ্ধিজীবী অধ্যাপক ড. সলিমুল্লাহ খান।
সেমিনারের প্রথমেই রোহিঙ্গা জাতির অবস্থা ও শরণার্থী সমস্যা নিয়ে প্রবন্ধ পাঠ করেন কবিতার রাজপথ’র সম্পাদক কবি মনির ইউসুফ। তিনি তার প্রবন্ধে উখে করেন, ‘আরাকানে আগ্রাসী সরকারি বাহিনী ও স্থানীয় সাম্প্রদায়িক দুবৃত্তদের হামলায় ও অত্যাচারে অতিষ্ঠ হয়ে রোহিঙ্গা লোকজন দলবেঁধে দেশ ছেড়ে পালাচ্ছে। সেখানকার রোহিঙ্গাদের উপর এরকম বর্বর হামলা পৃথিবীর ইতিহাসে নজিরবিহীন।’ কবি প্রশ্ন রেখেছেন ‘ এভাবেই কি খুন যাবে পদ্মাবতী, ধ্বংস হয়ে যাবে অপরুপ রোসাঙ?’
জোনায়েদ সাকি বলেন, মুক্তিযুদ্ধের সময় বাংলাদেশিদের অনেকেই শরণার্থীতে পরিণত হয়েছিল। তাই, বাংলাদেশকে বিশ্বের যে কোনোখানে জাতিগত নিপিড়ণের বিরুদ্ধে দাঁড়াতে হবে। এই রাষ্ট্র যদি প্রতিবেশি রোহিঙ্গাদের পাশে আশ্রয় ও সাহায্য-সহযোগিতা করে, তাহলে দেশের নাম ও মানবতাবোধ উজ্জ্বল হবে। আমরা এই সমস্যা তাই কোনোভাবে এড়িয়ে যেতে পারি না। বাংলাদেশ সরকারের প্রতি আহ্বান জানাই, এই নির্যাতিত জাতিগোষ্ঠীর প্রতি সহায়তার জন্য এবং তাদেরকে পুশ-ব্যাক না করে আশ্রয়কেন্দ্রে রেখে জাতিসংঘ ও আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোর সাথে বসে মিয়ানমারের সাথে আলোচনার মধ্য দিয়ে সমস্যার সমাধান করা হোক।
ব্যারিস্টার নুরুল আজিম বলেন, ‘রোহিঙ্গা ইস্যু ও শরণার্থী সমস্যা কেউ একা সমাধান করতে পারবে না। সেজন্য আন্তর্জাতিক পর্যায়ে কথা বলতে হবে। আন্তর্জাতিক ফোরামে বাংলাদেশের পক্ষ থেকে প্রসঙ্গটা গুরুত্বের সাথে তুলে ধরতে হবে।’
গোলাম শফিক বলেন, ‘শরণার্থী ক্যাম্পগুলোতে ঘুরে আমরা দেখেছি যে রোহিঙ্গারা কেউই বাংলাদেশে থাকতে চাইছে না। তাদের দাবি, তাদেরকে তাদের নিজ ভূমি, নিজ মাতৃভূমিতে ফিরিয়ে নেয়া হোক। তাই, জাতিসংঘ ও উন্নত দেশগুলোকে একত্রিত হয়ে মায়ানমারের উপর চাপ সৃষ্টি করে রোহিঙ্গাদের নাগরিকত্ব ফিরিয়ে দিতে হবে।’
উল্লেখ্য, প্রেসক্লাবের মূল ফটকে রোহিঙ্গাদের উপর নির্যাতন ও নিপীড়নের চিত্র প্রদর্শনী করা হয়। হাজারো সাধারণ জনতার সমাগম হয়।
পাঠকের মতামত: